বছর ঘুরে আবার শীত এসেছে। সাথে শুরু হয়েছে আমাদের স্কিনকেয়ার নিয়ে ব্যস্ততা। ত্বকের সুরক্ষায় নানান প্রোডাক্টও কিনে ফেলেছি আমরা অনেকেই। ত্বকের যত্ন অবশ্যই নেবেন, কিন্তু এর পাশাপাশি কিন্তু চোখের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
কারণ গবেষণামতে, অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীতের দিনগুলোতে চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এসময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে বলে চোখে ইরিটেশন হতে পারে ও দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
শীতকালে চোখের সবচেয়ে কমন সমস্যা হলো শুষ্কতা, অর্থাৎ চোখ শুকিয়ে যাওয়া। এটা চোখে জ্বালাপোড়া বা চুলকানির কারণ হতে পারে। এমনকি অনেকে চোখব্যথার কথাও বলে থাকেন। এটাও মনে হতে পারে যে, চোখে কিছু একটা পড়েছে। আসলে এই সময় চোখ আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়ে যায়, কারণ এ সময় বাইরে ধুলাবালি এবং শুষ্ক বাতাস বইতে থাকে, যা চোখকে শুষ্ক করে ফেলে।
চোখ শুষ্ক হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, ঘর ও অফিসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া। সাধারণত শীতে ঠান্ডা এড়াতে জানালা দীর্ঘসময় বন্ধ রাখা হয় ও হিটার চালু করা হয়। এর ফলে বাতাসের আর্দ্রতা আরো কমে যায়। এটা চোখের জন্য ভালো নয়।
যারা কন্টাক্ট লেন্স পরেন, তাদের চোখ শুকানোর প্রবণতা বেশি। তবে যে কেউ সমস্যাটিতে ভুগতে পারেন। নারীদের মধ্যে যাদের পিরিয়ড সাইকেল স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে যাচ্ছে এবং যাদের অলরেডি মেনোপজ (মাসিক চক্রের স্থায়ী সমাপ্তি) হয়েছে, তাদের চোখও সহজেই শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এসময় নারীশরীরে ইস্ট্রোজেন কমে যায় বলে এমনটা হয়।
চোখের শুষ্কতা দীর্ঘসময় থাকলে ধীরে ধীরে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে অথবা কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে দীর্ঘমেয়াদে অন্ধত্বের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
এসব ঝুঁকি থেকে বাঁচতে এবং শীতে চোখের সুরক্ষায় কি কি করা যেতে পারে তাই নিয়ে এবারের ব্লগ।
১। চোখ সবসময় পরিষ্কার রাখুন। চোখে ধুলো-বালি জমতে দেবেন না। বাইরে থেকে এসে ঠান্ডা পানিতে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
২। শীতকালেও নিয়মিত সানগ্লাস পরুন। জী, সানগ্লাসের ব্যবহার কেবল গরমকালের জন্য নয়, বরং শীতকালে এর গুরুত্ব আরো বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠান্ডার দিনগুলোতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে। খোলা চোখে সরাসরি সূর্যের আলোতে যারা দীর্ঘসময় কাটান, তাদের চোখে ছানি ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে চোখের পাতাও স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকে। শীতে আউটডোরে চোখকে প্রায় ১০০% সুরক্ষা দিতে ইউভি ৪০০ প্রটেকশন আছে এমন সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এতে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি বাতাসের শুষ্কতা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
৩। দীর্ঘসময় কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ২০ মিনিট পর পর অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য বিরতি নিন।
৪। শরীরে পানির ঘাটতি শুষ্ক চোখের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। তাই চোখকে আর্দ্র রাখতে এসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। আপনি চাইলে তরল স্যুপও খেতে পারেন। এছাড়াও প্রতিদিনের ডায়েটে রসালো ও পানিযুক্ত ফল রাখুন।
৫। কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে শুষ্ক চোখের সমস্যা বাড়তে পারে, চোখে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে তা সবসময় পরিষ্কার রাখুন । তবে তারপরও দিনে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে থাকা উচিত নয়। এতে চোখের নানা সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬। ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার চোখের জন্য খুবই উপকারী। কারণ, এর ফলে চোখে বেশি বেশি জলীয় পদার্থ তৈরি হয় এবং ড্রাই আই বা চোখের শুষ্কতার প্রবণতা কমে যায়। সমুদ্রের তৈলাক্ত মাছে প্রচুর ওমেগা ৩ পাবেন। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন।
৭। ড্রাই আই-এর সমস্যা থাকলে চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই উত্তম।
৮। শীতকালে ঘরের ভেতর এয়ার হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং চোখ ও স্কিন ভালো থাকবে।
এছাড়া চোখের ওভারঅল সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম নিশ্চিত করা খুবই জরুরী। তাই শোবার পর ফোনের ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। কারণ সাউন্ড স্লিপ আপনার চোখের পাশাপাশি শরীর এবং মনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।