ডিজিটাল আই স্ট্রেইন দূর করার/কমানোর উপায়  1

ডিজিটাল আই স্ট্রেইন দূর করার/কমানোর উপায় 

ডিজিটাল আই স্ট্রেইন সাধারণত চোখ ও দৃষ্টি শক্তির সঙ্গে জড়িত নানা সমস্যার একটি সমষ্টি, যা দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার, ট্যাবলেট, সেলফোন ইত্যাদি ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ফলে দেখা দিয়ে থাকে।
করোনা মহামারীর সময়টা মানুষের জীবনযাত্রার ধরণ অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। জীবন হয়ে পড়েছে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ স্ক্রিনের ওপর নির্ভরশীল। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের চোখ। এমনকি এখন বয়স্ক ও শিশু উভয়ের মধ্যেই ডিজিটাল আই স্ট্রেইন দেখা যাচ্ছে। তাই বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই নিজের অমূল্য চোখের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। 

ডিজিটাল আই স্ট্রেইন দূর করার/কমানোর উপায়  2
ছবিঃ সংগৃহীত

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিচে উল্লেখিত পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেনঃ  

১। নিয়মিত আই চেকআপ করান- ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা অনলাইল ক্লাসের কারণে সবারই ডিজিটাল স্ক্রিন টাইম বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। দীর্ঘ স্ক্রিনটাইমের কারণে অনেকেরই মাথা ব্যাথা, চোখ ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি আবছা হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর আই চেকআপ করানো উচিত। 

২। মনে করে পলক ফেলুন- একটানা অনেকক্ষণ মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনে কিছু দেখার সময় আমরা চোখের পলক ফেলতে ভুলে যাই। এর ফলে আমাদের টিয়ার ফিলসগুলো পুনরায় পরিপূর্ণ হয় না এবং এতে চোখে শুষ্কতা দেখা দিতে এবং ব্যাথা বাড়তে পারে। এ ছাড়াও অকারণে চোখে পানি আসা ও আবছা দৃষ্টির সমস্যাও হতে পারে।

৩। ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল ঠিক করুন- যেকোনো স্ক্রিন চোখ থেকে কমপক্ষে এক হাত বা ২০ থেকে ২৮ ইঞ্চি দূরে এবং আই লেভেল থেকে ৪ ইঞ্চি নীচে রাখা উচিত। অনেকে আছেন যারা ল্যাপটপ বা প্যাডজাতীয় ডিভাইসগুলো নিজের কোলের ওপর রেখে ঘাড় কাত করে তা দেখতে থাকেন। এর ফলেও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

৪। স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা ঠিক করুন- আপনি যে জায়গাটায় বসে কাজ করেন, সেখানকার আলোর সাথে আপনার স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা অ্যাডজাস্ট করে নিন। আলোর মাত্রা অতিরিক্ত বেশি বা কম হলে তা চোখে বেশি চাপ সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টির সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই যে জায়গায় বসে কাজ করবেন সেখানে যথাযথ পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা করে রাখুন। কখনোই কম বা বেশি আলোতে কাজ করবেন না। 

৫। অন্ধকারে স্ক্রিন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন- ঘর একদম অন্ধকার করে শুধু স্ক্রিনের আলোয় কাজ করবেন না। এছাড়াও ঘরের আলো থাকা উচিত আপনার মাথার উপরে। আলো যাতে সরাসরি স্ক্রিনের ওপর বা আপনার চোখে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। 

৬। স্ক্রিনের ক্ষতিকর ব্লু লাইট থেকে নিরাপদে থাকুন- যাদেরকে দীর্ঘসময় স্ক্রিনের সামনে থাকতে হয়, বিশেষ করে রাতের বেলায়; তারা স্ক্রিনের ব্লু লাইট থেকে চোখকে বাঁচাতে কম্পিউটার গ্লাসেস বা অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ লেন্সের চশমা ব্যবহার করুন। এই চশমা চোখের স্ট্রেস কমাতে, ঝাপসা ভাব, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। 

৭। ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন- এই নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ২০ মিনিট স্ক্রিন টাইমের পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের যেকোনো জিনিস দেখতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে জানালার বাইরে কোনও পাখি, ফুল বা গাছ দেখতে পারেন। আবার ২ মিনিটের বিরতি দিয়ে আবার কাজ শুরু করতে পারেন। এর ফলে ক্রমাগত চাপের মুখে পড়া পেশীগুলি স্বস্তি পাবে।

৮। পরিমিত সূর্যরশ্মি গ্রহণ করুন- আজকাল অধিকাংশ বাচ্চাই বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরে থাকে। ফলে তারা সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে কম আসে। এছাড়া এখন বড়রাও সূর্যের আলোতে অনেক কম আসেন। পরিমিত সূর্যের আলো চোখের মণির বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে স্ক্রিন টাইম বেড়ে যাওয়া ও সূর্যের আলোর সংস্পর্শে কম আসার ফলে অধিকাংশ বাচ্চার চোখেই চশমা দেখা যায়। সব মিলিয়ে ছোট-বড় সবার জন্যই কিছুটা সময় সূর্যের আলোয় আসা জরুরি। 

৯। অ্যান্টি গ্লেয়ার চশমা ব্যবহার করুন- চশমার অ্যান্টি গ্লেয়ার কোটিং কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ যেকোনো ডিভাইসের অতিরিক্ত আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এতে চোখের স্ট্রেস কমে এবং চোখ সুস্থ থাকে।

১০। পুষ্টিকর খাবার খান- চোখের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে এবং চোখের ক্লান্তি দূর করতে রোজ ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সবুজ ও অন্যান্য রঙ্গিন শাকসবজি, পেঁপে, খেজুর, ছোটমাছ ইত্যাদি চোখের জন্য খুবই উপকারি। চোখকে হাইড্রেটেড রাখতে ওমেগা-থ্রি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর পূরণে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। 

Leave a Reply

Change