গ্রীষ্মে চোখের যত্ন 1

গ্রীষ্মে চোখের যত্ন

প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল দেশবাসী। ঘড়ির কাঁটা সকাল ৮টা না ছুঁতেই শুরু হয়ে যায় সূর্যের সন্ত্রাস। তবে গরমে অনেকেই ত্বকের যত্নে নানা কিছু করলেও চোখের যত্নের প্রতি বেশিরভাগ মানুষই উদাসীন। এই গরমে শরীরের পাশাপাশি যত্ন নিতে হবে চোখেরও। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো সুরক্ষা ছাড়া দীর্ঘক্ষণ কড়া রোদে থাকলে চোখের ছানি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, এমনকি রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্ধত্ব এবং ক্যানসারেরও ঝুঁকি থাকে। যাদের কর্মসূত্রে বাইরে বেরোতে হয় এবং কড়া রোদে অনেকটা সময় কাটাতে হয়, গ্রীষ্মে নিজের অজান্তেই তাদের চোখের বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে। তাই এই সময়ে চোখের যত্ন নেওয়া খুব দরকারি। 

আজকে আমরা জানবো যে গরমকালে চোখের কি কি সমস্যা হতে পারে এবং এই সমস্যাগুলো দূরে রাখতে কিভাবে চোখের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।  

প্রথমে দেখা যাক গরমে সাধারণত কি কি চোখের সমস্যা হয়।

গ্রীষ্মে চোখের যত্ন 2
ছবিঃ সংগৃহীত

চোখের অ্যালার্জিঃ গ্রীষ্মকালে চোখের অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও দূষণের কারণে প্রায়ই চোখ চুলকায় ও লালচে রঙ ধারণ করে। এমনকি রোদে গেলে চোখ জ্বালাপোড়াও করতে পারে।

চোখের অঞ্জনিঃ অঞ্জনি হলে চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখ লাল হয়ে যায় ও ব্যথা করে। এগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে।

অনবরত পানি ঝরাঃ অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকের চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানির পাশাপাশি চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। এ ধরনের সমস্যা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চোখের ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। 

চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়াঃ গরমে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বা অনবরত পানি বের হলে চোখের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে চোখ সবসময় শুকনো থাকতে পারে। 

ইউভি/অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবঃ খোলা চোখে বেশিসময় ধরে রোদের মধ্যে কাজ করলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি রেটিনা তথা পুরো চোখেরই ক্ষতিসাধন করে।  

এবারে জেনে নেওয়া যাক গ্রীষ্মকালে কিভাবে চোখের যত্ন নিতে হয়। 

গ্রীষ্মে চোখের যত্ন 3
ছবিঃ সংগৃহীত

সানগ্লাস ব্যবহার করাঃ গ্রীষ্মকালসহ যেকোনো রৌদ্রজ্জ্বল দিনেই বাইরে বেরোলে অবশ্যই সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এটি একইসাথে রোদ এবং অতিরিক্ত তাপ থেকে চোখকে রক্ষা করবে। অতিরিক্ত তাপ, রোদ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, সবগুলোই চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই ইউভি প্রোটেক্টেড রোদচশমা পরে তবেই রোদে বের হওয়ার পরামর্শ থাকবে। 

রোদ এড়িয়ে চলাঃ খুব দরকার না হলে কড়া রোদে বাইরে বের না হওয়াই ভালো। তবে দুপুরের রোদ আর তাপ চোখের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। তাই এই সময়টা ঘরে বা ছায়ায় থাকাই ভালো। আর যদি রোদে বেরতেই হয়, তবে সানগ্লাসের সাথে হ্যাট/ক্যাপজাতীয় কিছু পরে বেরোতে পারেন। এতে রোদ থেকে মাথা এবং চোখ দুই-ই রক্ষা পাবে।

প্রসাধনী বা কসমেটিকস্‌ ব্যবহারে সতর্কতাঃ প্রসাধনী চোখের জন্য ক্ষতিকর। এই গরমে চোখে অতিরিক্ত মেকআপ এবং কসমেটিকস্‌ ব্যবহার করলে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা, ব্লেফারাইটিস বা অঞ্জনি ইত্যাদি রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া প্রখর রোদের হাত থেকে বাঁচতে যারা সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন, তারা মুখে এবং চোখের পাতায় সানস্ক্রিন লাগানোর সময় সাবধান থাকবেন। এই ক্রিম (বিশেষ করে যেগুলোতে এসপিএফ বেশি) চোখে লাগলে প্রচণ্ড জ্বালা করে যা থেকে পড়ে বড় সমস্যাও হতে পারে। 

চোখে ধুলা-ময়লা জমতে না দেওয়াঃ সারাদিনে ৪-৫ বার ঠান্ডা ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে চোখমুখ ধুয়ে নিন অথবা চোখে পানির ঝাপটা দিন। এতে সূর্যের প্রখর তাপ থেকে আরাম পাওয়ার পাশাপাশি বাইরের ধুলা-ময়লা জমে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা একদম কমে যায়। 

সুইমিং গগল ব্যবহার করাঃ সুইমিং পুলের পানিতে থাকা ক্লোরিন চোখের কর্নিয়ার উপর একটি স্তর তৈরি করে যা দীর্ঘমেয়াদে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা করে দিতে পারে। অন্যান্য সাধারণ জলাধারে ক্লোরিন না দেওয়ার কারণে জীবাণু জন্মানোর সুযোগ পায় যা চোখে চুলকানীসহ নানারকম সংক্রমণের কারণ । তাই সুইমিং পুল বা যে কোনো জলাধারে সাঁতার কাটতে গেলে সুইমিং গগল পরা উচিত।

দেহের আর্দ্রতা ঠিক রাখাঃ গরমকালে চোখের সুস্থতার জন্য শরীরে প্রচুর পরিমাণে জলীয় পদার্থ থাকতে হয়। দৈনিক খাবারের তালিকায় শসা,তরমুজ, পাকা পেঁপে, অন্যান্য রসালো ফল এবং সবজি থাকলে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে। এছাড়াও গ্রীষ্মকালে যেহেতু ঘাম বেশি হয়, তাই প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত। বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ৩ লিটার পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে চোখসহ পুরো শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় থাকে।

হাত পরিষ্কার রাখাঃ হাত থেকে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই যেকোনো সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে চোখে কোনো ওষুধ দেওয়ার আগে অথবা কন্ট্যাক্ট লেন্স পরার আগে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত। 

সরাসরি এসির বাতাস এড়িয়ে চলাঃ এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) বাতাসে চোখ অনেক বেশি শুষ্ক এবং সেনসিটিভ হয়ে যেতে পারে। তাই খেয়াল রাখবেন যেন এসির বাতাস সরাসরি চোখে না লাগে।

আই ড্রপ ব্যবহার করাঃ গ্রীষ্মে অনেকেরই চোখ শুকিয়ে যায় এবং জ্বালাপোড়া করে। এমন হলে চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আই ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়াও যারা প্রতিদিন দীর্ঘসময় কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করেন, তারা অ্যান্টি-ব্লু লাইট চশমা ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখমুখ ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আর হ্যাঁ, সুস্থ রাখার জন্য চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে। এর জন্য প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। 

চোখ মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। গ্রীষ্মের রোদ, তাপ ও ধুলাবালি চোখের স্বাস্থ্যের ওপর নানারকম প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ সময়ে চাই চোখের বিশেষ যত্ন।

Leave a Reply

Change