বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বেশ কমন একটি রোগ। মানুষের শরীরে স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপ। রক্তচাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়। রক্তচাপ যখন ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ চাপের বেশি হয়, তখন ওই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে অনেকেই ‘প্রেশার’ হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে মানুষের স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, হৃদরোগ, কিডনিরোগসহ নানা ধরণের সমস্যা হয়। তবে জানেন কি, উচ্চ রক্তচাপের কারণে দৃষ্টিশক্তিও নষ্ট হতে পারে! এটি কিন্তু অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, পৃথিবীজুড়েই মানুষের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার বা অন্ধত্বের একটি বড় কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ।
এই ব্লগে আমরা উচ্চ রক্তচাপজনিত দুই ধরণের চোখের রোগ সম্পর্কে জানবো।
১। হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি (Hypertensive Retinopathy)
চোখের রেটিনা ও নার্ভে অসংখ্য সূক্ষ্ম রক্তনালি থাকে। দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে এই রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলে ‘হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি’।
এক্ষেত্রে প্রথমে রেটিনার রক্তনালিগুলো সরু হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে রেটিনার রক্তনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া রক্তনালীতে ক্ষতের সৃষ্টিও হতে পারে। এসব কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
এ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের জটিলতার চিকিৎসা করাতে হবে। কেননা হাইপারটেনশনের মাত্রা ও মেয়াদ বেশি হলে হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথির মাত্রাও বেশি হতে পারে। এর ফলে চোখের অপটিক স্নায়ু শুকিয়ে স্থায়ীভাবে অন্ধত্ববরণ করতে হতে পারে।
২। গ্লুকোমা (Glaucoma)
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চোখের উপরও চাপ বেড়ে যায় এবং অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে কমে যায় দৃষ্টির পরিসীমাও। এমন অবস্থাকে বলা হয় গ্লুকোমা। গ্লুকোমা সাধারণত ঘটে যখন চোখে অতিরিক্ত তরল তৈরি হয় ও চোখের ভেতরে চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। সঠিক চিকিৎসা না পেলে গ্লুকোমার কারণে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কারো দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তার গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার হার স্বাভাবিক রক্তচাপের মানুষদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দেখা যায়।
করণীয়ঃ
উচ্চ রক্তচাপজনিত চোখের সমস্যায় যত দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া যায়, ততোই মঙ্গল। এক্ষেত্রে মূল চিকিৎসা হল রক্তচাপকে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা। তবে চোখে জটিলতা তৈরি হয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রেটিনায় লেজার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে দৃষ্টির উন্নতি সম্ভব। তবে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, কিডনির সমস্যা, রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে সেগুলোর চিকিৎসাও একইসাথে করাতে হবে।