চোখ নিয়ে অন্ধবিশ্বাস

মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে সম্ভবত চোখ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জেনে অবাক হবেন যে, চারপাশের পরিবেশ থেকে মানুষের মস্তিষ্কে যত তথ্য পৌঁছায়, তার প্রায় ৮০ শতাংশই আসে শুধুমাত্র চোখের মাধ্যমে। অন্যভাবে বললে, ব্রেইনের পাঁচভাগের চারভাগ জায়গা সংরক্ষিত থাকে শুধু চোখের জন্য আর মাত্র একভাগ বাকি চারটি ইন্দ্রিয়ের জন্য।
চোখ নিয়ে যেমন লেখা হয়েছে নানারকমের গান, কবিতা, গল্প; পাশাপাশি আছে নানা রকমের ভুল ধারণাও।
চলুন জেনে নেই চোখ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে:

ধারণা- ১ঃ অল্প আলোতে পড়লে চোখের জ্যোতি কমে যায় 

ছবিঃ সংগৃহীত

বাস্তবতাঃ অনেকেই বিশ্বাস করেন যে অল্প আলোয় পড়লে চোখের জ্যোতি কমে যায়। সত্যি বলতে এমন বিশ্বাসের কোনও ভিত্তি নেই। তবে এটা ঠিক যে অল্প আলোতে পড়লে চোখ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়।
তাই চোখের আরামের জন্য পর্যাপ্ত আলোতে পড়া উচিত। 

ধারণা- ২ঃ গাজর খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে 

ছবিঃ সংগৃহীত

বাস্তবতাঃ গাজরে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে, গাজর খাওয়া তাই চোখের জন্য ভালো। তবে বাস্তবতা হলো চোখের জ্যোতির জন্য খুব সামান্য পরিমাণ ভিটামিন এ লাগে, যা সবুজ ও অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের শাক-সবজি, দুগ্ধজাত খাবার ও মাছ থেকে পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ-সমৃদ্ধ খাবার চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে বটে, তবে জ্যোতি বাড়ায় না। 

ধারণা- ৩ঃ চশমা সবসময় না পরলেও চলে 

ছবিঃ সংগৃহীত

বাস্তবতাঃ ডাক্তার যদি আপনাকে চশমা দিয়ে থাকেন, তাহলে তা সবসময় পরতে হবে। না পরলে চোখের উপর চাপ পড়ে এবং চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়। 

ধারণা- ৪ঃ কম্পিউটারের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়

বাস্তবতাঃ লম্বা সময় ধরে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ক্লান্ত হয় ঠিক, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি কমে না। তাই চোখের প্রশান্তির জন্য পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করুন। এক-দুই ঘণ্টা পর পর ১০ মিনিট বিরতি নিন। এতে চোখ ক্লান্ত হবে না। সবচেয়ে ভালো হয় ২০-২০-২০ মেথড ফলো করুন। 

ধারণা- ৫ঃ লক্ষ্মী ট্যারা সৌভাগ্যের লক্ষণ

ছবিঃ সংগৃহীত

বাস্তবতাঃ সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে অনগ্রসর জনগোষ্ঠির মধ্যে বহুকাল ধরে একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে, চোখ সামান্য ট্যারা বা বাঁকা হওয়া সৌভাগ্যের লক্ষণ। সেকারণে সামান্য ট্যারা চোখকে তারা লক্ষ্মী ট্যারা বলে ডাকেন।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি ভুল ধারণা। আর এই ভুল ধারণা পুষে রেখে যথাসময়ে  চিকিৎসা না করানোর ফলে ধীরে ধীরে চোখের জ্যোতি করে যায়। এমনকি অনেক শিশু অন্ধও হয়ে যায়। 

ধারণা- ৬ঃ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের জ্যোতি কমে 

ছবিঃ সংগৃহীত

বাস্তবতাঃ মানুষের মধ্যে চোখ নিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হলো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের জ্যোতি কমতে থাকবে। এটা বেশিভাগ ক্ষেত্রে ঠিক হলেও, সব ক্ষেত্রে নয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন প্রেসবায়োপিয়া, ছানি ও গ্লুকোমা। এগুলো দৃষ্টিশক্তি কমানোর জন্য দায়ী। তবে নিয়মিত চোখের পরীক্ষা, চোখের যত্ন ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া রোধ করতে বা গতি ধীর করে সাহায্য করে।  

ধারণা- ৭ঃ চোখ প্রতিস্থাপন করা যায়
বাস্তবতাঃ অনেকে মনে করেন যে পুরো চোখই প্রতিস্থাপন করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা এখনও করা যায় না। চোখ একটি অতি জটিল অঙ্গ, যেটি অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্কিষ্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে। অপটিক স্নায়ু যদি কেটে যায়, তাহলে আর সেটাকে জোড়া দেওয়া যায় না।
তবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে অনেককে  অন্ধত্বের হাত থেকে বাচাঁনো যায়।

Leave a Reply

Change